ঐতিহ‍্য পরম্পরা মেনে পাত্রসায়ের এর হাজরা বাড়ীতে পূজিত হবেন দেবী : চলছে প্রস্তুতি

7th October 2020 4:20 pm বাঁকুড়া
ঐতিহ‍্য পরম্পরা মেনে পাত্রসায়ের এর হাজরা বাড়ীতে পূজিত হবেন দেবী : চলছে প্রস্তুতি


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) :  কালের নিয়মে পুজোর জাঁকজমকে কিছুটা ভাটা পড়লেও স্বমহিমায় আজও নিয়ম-নীতি মেনে পূজিতা হয়ে আসছেন মা মহিষমর্দিনী দেবী দুর্গা। বাঁকুড়া পাত্রসায়ের ব্লকের সবচেয়ে প্রাচীন এই দূর্গা পূজা হাজরা জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো।সেই সময় বর্ধমান রাজার সঙ্গে বিষ্ণুপুর মল্ল রাজার সীমানা অতিক্রম করে খাজনা আদায় করা নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগেই থাকত। পাত্রসায়ের ছিল বিষ্ণুপুর এবং বর্ধমান রাজ সীমানার একেবারে শেষ অংশ। সে কারণেই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলাদেশ ময়মনসিংহ জেলার নিবাসী কাঞ্জিলাল চক্রবর্তীকে বিষ্ণুপুর মল্লরাজ সেনাধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত করেন । পাত্রসায়ের এলাকার প্রায় কয়েশো বছর আগে হাজার একর জমি দিয়ে তাদের জমিদারিত্ব পত্তন করেন । আর এই হাজার একর জমির মালিকানা হিসেবেই চক্রবর্তী থেকে তাদের পদবী পরিবর্তন হয়ে উপাধি পান হাজরা ।  বংশের আদি পুরুষ কাঞ্জিলাল এর চার সন্তান । বড় ছেলে চার সন্তানের পিতা হলেও অন্য তিন ছেলেরা নিঃসন্তান ছিলেন । বংশানুক্রমে জমিদারি কিভাবে চলবে এই নিয়ে সেনাধ্যক্ষ কাঞ্জিলাল শোকহত ছিলেন । কাঞ্জিলালের বড়ছেলের তৃতীয় সন্তান হরিপদ ঘোড়ায় চড়ে একদিন খাজনা আদায় করতে গিয়েছিলেন তৎকালীন জঙ্গলাকীর্ন রাস্তায় ফিরে আসার দিকভষ্ট হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন । স্থানীয় রঙ্কিনী পুষ্করিণীর জল পান করে একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন । সেই সময় মা দুর্গা বালিকা রূপে রঙ্কিনী পুষ্করিণী থেকে উঠে এসে তাকে পথ দেখিয়ে দেন । এরপর এই অলৌকিক ঘটনার কথা জানিয়ে মেজো ছেলে হরিপদ বিষ্ণুপুর মল্ল রাজা কে একটি চিঠি লেখেন । সেই থেকেই বিষ্ণুপুর রাজের অর্থানুকূল্যে শুরু হয় মা মহামায়া পুজো । প্রতিষ্ঠি হয় মন্দিরের । তারপর থেকেই সেই সাড়ে চারশো বছর সমসাময়ীক কাল ধরেই রীতিনীতি মেনে চলে আসছে হাজরাবাড়ী মা দুর্গার আরাধনা । জমিদার বাড়ির পুজোর রীতিনীতি অন্যান্য সার্বজনীন পূজা থেকে কিছুটা হলেও আলাদা । একচালা মন্দিরে মহিষমর্দিনী দেবীর প্রতিমা । আজও বৃহৎ নন্দিকা পুরান মতে হয়ে আসছে পুজো । নিয়ম-নীতি মেনে আদিকাল থেকেই অষ্টমীর দিন হয় বলির আয়োজন । 

তবে এবারের করোনার পরিস্থিতি সরকারি নির্দেশ মেনে মুখে মাক্স স্যানিটাইজার সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনেই করা হবে পুজো । ফুল বেলপাতা নিজের নিজের বাড়ি থেকে এনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দেওয়া হবে পুষ্পাঞ্জলী । তবে এবার বাড়ির অন্যান্য সদস্য যারা দূর দূরান্তে থাকেন তারা এই সময় করোনা অবহে জমিদার বাড়ির প্রাচীন পুজোয় শামিল হতে পারবেন না । জাকজমকে রাস পড়লেও কিছুটা মন খারাপ এর মধ্যেই এবছও রীতিনীতি মেনে পূজার্চনা হবে নিষ্ঠার সঙ্গে বলেই দাবি জমিদার পরিবারের সদস্যদের ।

 





Others News

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : তোপধ্বনি তে কেঁপে উঠল বিষ্ণুপুর । শুরু হল মল্ল রাজাদের ১০২৫ বছরের অষ্টমী পূজোর সন্ধিক্ষণ।

প্রাচীণ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও নিষ্ঠাভরে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে দেবী দুর্গা 'মৃন্ময়ী নামে পূজিতা হন। জানা গিয়েছে, পূর্ব প্রথা মতোই প্রাচীণ রীতি মেনে মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে কামান দাগার মধ্য দিয়ে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে শুরু হয়ে গেল 'বড় ঠাকরুনে'র পুজো। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শক সাধারণের উপস্থিতি ছিল বাঁধভাঙ্গা। সরকারী নিয়মকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে দেবী বন্দনা। এমনকি এখানে কামান দাগার পর্বেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে অল্প সংখ্যক লোককে নিয়ে ঐ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

শুরুর সময় থেকে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করা হয় বড় কামানের গর্জনের শব্দে। যার আওয়াজে রাজবাড়িতে আরতি নৃত্যও শুরু হয়ে যায়।